প্রকাশিত: ২২/০৯/২০২০ ১১:২৫ এএম

‘দ্য লেডি’ খ্যাত মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি এবার দেশের ভেতরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। যিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনিও একজন নারী। স্বাধীনচেতা, স্পষ্টবাদিতার তকমায় ইতোমধ্যে তিনিও ‘লেডি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। থেট থেট খিন- মিয়ানমার রাজনীতির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেত্রী সু চির একমাত্র চক্ষুশূল। দেশটির নির্বাচনী ইতিহাসেও সু চির বিরুদ্ধে প্রথম কোনো নারী প্রার্থী। এএফপি, মালয় টাইমস।

এক সময় সু চির দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনএলডি’র এমপি ছিলেন খিন। ৫৩ বছর বয়সী এ নারীকে গত বছর দল থেকে বরখাস্ত করেন সু চি। সেই থেকেই ক্ষোভ। তার পরই এনএলডির বিরুদ্ধে লড়তে পিপলস পাইওনিয়ার পার্টি (পিপিপি) গড়ে তোলেন। মাত্র এক বছরেই বেশ শক্তপোক্তভাবেই জেঁকে বসেছে তার দল। নবনির্মিত এই দল নিয়েই নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সু চির মতো লৌহমানবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছেন থেট থেট খিন। প্রথমবারেই ২৪৮ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে পিপিপি।

সু চির দলকে ‘নৈরাজ্যকর ও স্বৈরাচারী’ বলে তুলোধুনা করা খিন অবশ্য সু চির বিরুদ্ধে কঠোর হলেও মিয়ানমারের প্রতাপশালী সেনাবাহিনীর বিষয়ে নরম। তার দাবি- গণহত্যায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, তাদের সঙ্গেই কাজ করে যেতে হবে।

৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মিয়ানমারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রায় অর্ধশতাব্দীর সামরিক শাসনের পর গণতন্ত্রে ফেরা মিয়ানমারে এটি দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন। এতে সু চির দল এনএলডিকেই জনগণ আবার ক্ষমতায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সু চির দল থেকে বহিষ্কৃত খিন আশা করছেন তার দল ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে। থেট থেট খিনের অনেক পরিচয় আছে। সু চির দলের পক্ষে ২০১৫ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে তিনি ছাত্র অধিকারকর্মী ছিলেন। তার পরে তিনি ডাক্তার হন এবং ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এমনকি জুয়েলারি ব্যবসায় ভালো করায় জুয়েলারি ম্যাগনেট হিসেবে তার পরিচিতি তৈরি হয়। জাত ব্যবসায়ী হিসেবে সুখ্যাত খিনের রাজনৈতিক বিচক্ষণতাও চমক সৃষ্টি করছে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের মতো কট্টর বৌদ্ধ দেশে প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া সমকামী প্রার্থী করছে পিপিপি। সু চি যেখানে মুসলিম নেতাদের প্রার্থী করতে দ্বিধায়, সেখানে মাঠে নেমেই একজন মুসলিমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এসব তার বৈচিত্র্যের প্রমাণ বলে প্রচার করা হচ্ছে।

খিনের সব কিছুই ভালোভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ তিনি সু চির সুনজর থেকে ছিটকে পড়েন এবং তারপরই এনএলডির বিরোধিতার পথ বেছে নেন। তার মতে, দেশের সমস্যার কোনো সমাধান আর এনএলডির হাতে নেই। দলটিকে স্বৈরাচারী তকমা দিয়ে খিন বলেন ‘সেখানে এক ব্যক্তি সব কিছুর সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।’ মজার বিষয় হচ্ছে, এনএলডির কিছু করার নেই বললেও দেশের সমস্যার সমাধানে সেনাবাহিনীর অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন খিন। রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীকে সমস্যা সমাধানের একটি অংশ বলে মনে করেন তিনি। সেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি বাবা ও মা লড়াই করেন তবে সন্তান জানে না তার কী করা উচিত। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে মোট সংসদীয় আসনের এক-চতুর্থাংশ ও তিন প্রধান মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। ফলে সু চিসহ কেউই দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার সাহস পায় না। এর ব্যতিক্রম নয় খিনের পিপিপিও।

থেট থেট খিন দাবি করেন যে তার দল মধ্যপন্থী। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় তিনি এবং তার দলও চরম কট্টরপন্থী। কট্টরপন্থী বৌদ্ধ মঙ্ক বা ধর্ম প্রচারকদের সঙ্গে দলটির যোগসাযশ রয়েছে। রোহিঙ্গা জাতিগত নিধন ইস্যুতে জাতিসংঘে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিচারের মুখোমুখি হওয়াকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন খিন। তার মতে, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেবল ‘মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে। কিন্তু সেখানে ‘জাতিগত নিধন বা গণহত্যার’ মতো ঘটনা ঘটেনি।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার জান্তা ঘনিষ্ঠদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাঘনিষ্ঠ চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ ...

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ব্ল্যাকলিস্ট, তালিকায় এক ডজন দেশ

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ভিসা পাওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...